Md. Golam Rabbani Dukhu Mia

১১ মার্চ ২০১৮ ১২:০০


বিভাগ: চিকিৎসাবিজ্ঞান

পড়ার সময়: ৩ মিনিট


আমরা স্বপ্ন দেখি কেন?


যদি নন-সায়েন্টিফিকভাবে বলি তাহলে, স্বপ্ন হলো আমাদের অবচেতন মনের স্মৃতি, ইচ্ছা, ঘটনার কিছু অংশ এবং বাস্তব কিছু ঘটনার জগাখিচুড়ি কিংবা কাচ্চি বিরিয়ানি!

সাধারণত মানুষ জীবনের ৩৩-৪০% সময় ঘুমিয়ে কাটায়। এ সময়ের মধ্যে আমরা অনেকেই স্বপ্ন দেখি। কারণ, ঘুমানো অবস্থায় ইন্দ্রিয় স্তিমিত হয় কিন্তু সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় হয় না। এবার বিষয়টি ব্যাখ্যা করা যাক....

স্বপ্ন নিয়ে গবেষণা ও বিশ্লেষণ করার জন্য আমাদের দেখতে হবে, তখন আমাদের মস্তিষ্কের অবস্থা কেমন থাকে। কেননা সকল চিন্তা চেতনার কেন্দ্র হলো আমাদের মস্তিষ্ক। স্বপ্ন নিয়ে এ সংক্রান্ত গবেষণার জন্য সবচে বেশী যে যন্ত্রটি ব্যবহৃত হয় সেটি হলো- পজিট্রন ইমিশন টমোগ্রাফার (PET)।

স্বপ্ন দেখাকালীন সময়ে পজিট্রন ইমিশন টমোগ্রাফি (PET) স্ক্যান এর মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা দেখতে পেয়েছেন যে, মস্তিষ্কের যুক্তি নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র ‘প্রিফন্টাল কর্টেক্স’ অপেক্ষাকৃত অনেক কম সক্রিয় থাকে। কিন্তু আমাদের মস্তিষ্কের ‘লিম্বিক সিস্টেম’, যেটি কিনা আমাদের আবেগের কেন্দ্র, সেটি ঘুমন্ত অবস্থাতেও পুরোপুরি সক্রিয় থাকে। আর তাই স্বপ্নগুলো হয় অনুভূতি সম্পন্ন।

ঘুমের প্রধানত দুটি পর্যায় থাকে।

প্রথমটি:- নন-র‌্যাপিড আই মুভমেন্ট (NREM - Non-rapid eye movement sleep)।

দ্বিতীয়টি:- র‌্যাপিড আই মুভমেন্ট (REM- rapid eye movement sleep) পর্যায়।

প্রথম পর্যায়টি আমাদের ঘুমের ৭৫ শতাংশ অংশ জুড়ে থাকে। এ সময় আমাদের শরীরের কার্যক্রম উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কম থাকে। আর REM পর্যায়টি অনেক ছোট। এ সময় আমাদের মস্তিষ্ক প্রায় জাগ্রত অবস্থার মতো সচল থাকে এবং আমরা এ পর্যায়ে স্বপ্ন দেখি। আর যুক্তি নিয়ন্ত্রণের কেন্দ্র ‘প্রিফন্টাল কর্টেক্স’ অপেক্ষাকৃত অনেক কম সক্রিয় থাকার কারণে আমরা স্বপ্নের মধ্যে উড়তে পারি কিংবা কোনো সমস্যার কল্পিত সমাধান খুব সহজেই করে ফেলতে পারি। এই ধরনের স্ক্যানিং ও কিছু কেমিকেল এক্সপেরিমেন্ট এর মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা স্বপ্ন সম্পর্কে আমাদের জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটাতে পেরেছেন। কিন্তু স্বপ্ন নিয়ে বিজ্ঞানীরা অনেক গবেষণা করার পরও তারা এ ব্যাপারে সব কিছু পরিপূর্ণ জানতে পারেননি।

যদি নন-সায়েন্টিফিকভাবে বলি তাহলে, স্বপ্ন হলো আমাদের অবচেতন মনের স্মৃতি, ইচ্ছা, ঘটনার কিছু অংশ এবং বাস্তব কিছু ঘটনার জগাখিচুড়ি কিংবা কাচ্চি বিরিয়ানি! বিজ্ঞানের যে শাখায় স্বপ্ন নিয়ে কাজ বা গবেষণা করা হয় তাকে বলে ওনেরোলোজি (Oneirology)। আমরা যখন ঘুমিয়ে থাকি আমাদের ব্রেইনের কিছু অংশ থাকে বিশ্রামে আর কিছু অংশ থাকে যা আমাদের স্মৃতিগুলো নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটায় এক কাপ চায়ের সাথে, just joking! যেহেতু আমাদের ব্রেইনের প্রত্যেকটা নিউরন কানেক্টেড।

বলে রাখা ভালো, মস্তিষ্কের অংশ কর্টেক্সে থাকে আমাদের বাস্তব অভিজ্ঞতা, বাস্তব কিছু ঘটনা। আর মধ্য মস্তিষ্কে থাকে আমাদের ইচ্ছা, মোটিভেশন ও অনুভূতি। সংক্ষেপে বলতে গেলে, আমাদের ব্রেইনের চেতন অংশ অর্থাৎ ফ্রন্ট কর্টেক্স যখন অবচেতন অংশে নজর দেয় তখনি আমরা স্বপ্ন দেখি। যখন আমরা স্বপ্ন দেখি তখন আমাদের মস্তিষ্ক থেকে Norepinephrine, Serotonin, Histamine নিঃসরণ বন্ধ করে দেয়। ফলে আমাদের পেশি চলাচল সম্পূর্ণ রূপে বন্ধ থাকে। এই ঘটনা তখনই হয় যখন আমরা র‌্যাপিড আই মুভমেন্ট (REM- rapid eye movement sleep) পর্যায় এ থাকে। তাই স্বপ্নে যখন আমরা দৌড়াদৌড়ি কিংবা চলাফেলা করি বাস্তবে কিন্তু আমারা বিছানাতেই থাকি। এর ফলে অনেক সময় দেখা যায় যে আমাদের ঘুম ভেঙে গেছে কিন্তু কোনো ভাবেই শরীর নাড়াতে পারছি না। এর কারণ হিসেবে ওপরের তিনটা ক্যামিকেল এর নিঃসরণ বন্ধ হওয়া দায়ী। কিছু সময়ের মধ্যেই ক্যামিকেল নিঃসরণ শুরু হয় এবং আমরা আস্তে আস্তে শরীর নাড়াতে পারি। প্রায়ই যদি এরকম হয় তাহলে তা কিন্তু হয়ে উঠতে পারে স্লিপ প্যারালাইসিসের কারণ। এই ঘটনাকে কুসংস্কারে অনেকেই বলে, ভুতে ধরা। কিন্তু অনেকের ক্ষেত্রে Complete-RAM-atophia ডিসঅর্ডার আছে। যার কারণে মানুষ যখন স্বপ্ন দেখে তখন বাস্তবে নড়াচড়া করে বা ঘুমন্ত অবস্থায় স্বপ্নে হাঁটতে থাকে।

 

স্বপ্ন দেখার কারণ কী?
অনেক বিজ্ঞানী স্বপ্নকে কারণহীন ব্যাপার বলে মনে করেন। কিন্তু অনেকেই একে খুব গুরুত্ব নিয়ে দেখেন। একটু খেয়াল করলে দেখা যায় যে, আমাদের স্বপ্নের বেশিরভাগ ঘটনায় থাকে ভয়, চিন্তা, কঠিন কোনো কাজ অর্থাৎ নেগেটিভ অনুভূতিগুলো। এর কারণ হিসেবে বলা যায় যে, আমরা যখন স্বপ্নের কোনো ঘটনার বাস্তবে মুখোমুখি হই তবে তা যেনও দ্রুত বিশ্লেষণ করতে পারি।

আরেক ধরনের স্বপ্ন আছে, যাকে বলে Lucid Dream। এটি একটি বিশেষ স্বপ্ন যেখানে স্বপ্নে আপনি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। আপনি ইচ্ছে করলে স্বপ্নে কথা বলতে পারবেন, আপনি যা চান তাই করতে পারবেন। একটু চিন্তা করলেই হয়তো আমরা মনে করতে পারবো। Lucid Dream এ আপনি একটি ওয়ার্ক প্লেস পাবেন। সেই ওয়ার্ক প্লেস এ আপনি নিজের মত করে সব কিছুই করতে পারবেন। স্বপ্নে থাকা অবস্থায় আপনার মস্তিষ্কের বেশির ভাগ অংশকে কাজে লাগাতে পারবেন।

Lucid Dream - Tell yourself clearly that you want to dream, you want to be aware that you are dreaming and you want to remember it. Repeat like a mantra before going to sleep, “I will lucid dream tonight”. You instruct your brain to realize when you're dreaming, especially during the pre-sleep phase.