যারা উচ্চ অক্ষাংশে বসবাস করে তাদের খুব সম্ভবত রাতের আকাশে রঙ্গিন আলোর নাচানাচি দেখার অভিজ্ঞতা হয়েছে। আকাশের এই দৃশ্য- অরোরা উষা, অরোরা অস্ট্রালিস বা দক্ষিণা আলো নামে পরিচিত। ইংরেজি উচ্চারণ হলো অরোরা বোরিয়ালিস (Aurora Borealis)। রাতের আকাশে এই Aurora Borealis দেখতে খুবই সুন্দর। তবে, কিছু কিছু কুসংস্কারচ্ছন্ন মানুষ আছে যারা মনে করে অরোরাতে তাদের পূর্বপুরুষদের আত্মা নাচানাচি করে। নর্জ মিথোলোজিতে বলা হয়েছে, ‘অরোরা হচ্ছে ইশ্বরসৃষ্ট আগুনের সেতু।‘ আসলে এগুলো নিছক গল্প।
অরোরা কী কারণে সৃষ্টি হয়?
সূর্য আমাদের থেকে প্রায় ৯৩মিলিয়ন মাইল দূরে অবস্থিত। কিন্তু এর প্রভাব বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত। সূর্য পৃষ্ঠে ঝড় উঠলে এর চার্জিত কণা মহাকাশে ছড়িয়ে পড়ে। আমাদের পৃথিবী যদি এর কাছাকাছি যায় তবে পৃথিবীর ম্যাগনেটিক ফিল্ড এবং বায়ুমণ্ডল এর প্রতিক্রিয়া করে।
যখন সূর্যের চার্জিত কণাগুলো আমাদের পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের অণু-পরমাণুকে আঘাত করে তখন সেই চার্জিত কণাগুলো বায়ুমন্ডলের অণু-পরমাণুগুলোকে আন্দোলিত করে এবং উজ্জ্বল করে তোলে।
পরমাণু আন্দোলিত হয়; এর মান কী?
পরমাণু নিউক্লিয়াস এবং নিউক্লিয়াসকে আবর্তনকৃত ইলেক্ট্রন দ্বারা গঠিত। যখন সূর্য থেকে আগত চার্জিত কণা বায়ুমন্ডলের পরমাণুকে আঘাত করে তখন ইলেক্ট্রনগুলো উচ্চ শক্তিস্তরে (নিউক্লিয়াস থেকে আপেক্ষিকভাবে অনেক দূরে) ঘুরতে শুরু করে। তারপর যখন আবার কোনো ইলেক্ট্রন নিম্ন শক্তিস্তরে চলে আসে তখন সেটি ফোটন বা আলোতে পরিণত হয়।
অরোরাতে যা ঘটে তেমনটি ঘটে নিয়নের বাতিতেও। নিয়ন টিউবের মধ্যে নিয়ন গ্যাসের পরমাণুগুলোকে আন্দোলিত করবার জন্য ব্যবহৃত হয় বিদ্যুৎ। তাই নিয়নের বাতিগুলো এরকম উচ্চ মানের রঙ্গিন আলো দেয়। আরোরাও ঠিক এভাবে কাজ করে-তবে এটি আরো বড় মাত্রায় হয়।
অরোরাগুলো মাঝে মাঝে আলোর পর্দার মতো দেখায়। তবে এরা গোলাকার অথবা সর্পিল বা বাঁকানোও হতে পারে। আবার অনেকসময় এগুলো পৃথিবীর ম্যাগনেটিক ফিল্ডের মতোও হয়। বেশিরভাগ আরোরাতে সবুজ রঙ এবং গোলাপী রঙ দেখা যায়। তবে অনেকসময় লাল রঙ বা বেগুনী রঙের হতে পারে।
অরোরা সাধারণত দেখা যায় উত্তরের দেশগুলোতে। কানাডা, রাশিয়া, নরওয়ে ও গ্রিনল্যান্ডের মতো উত্তরের দেশগুলোতে অরোরার দেখা মিলে। তবে উচ্চ মানের অরোরা দেখা যায় দক্ষিণ অক্ষাংশের রাষ্ট্রগুলোতে বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রে। তাছাড়া, মেরু অঞ্চলেও এর দেখা মিলবে।
মানব ইতিহাস জুড়ে আরোরার রঙ গুলো রহস্যময়। বিভিন্ন মিথোলোজিতে বিভিন্ন কুসংস্কার উল্লেখ করা হয়েছে এই নিয়ে। তবে বিজ্ঞান বলে, আমাদের বায়ুমণ্ডলের গ্যাসগুলোই হলো অরোরার বিভিন্ন রঙের কারণ।
উদাহরণ- অরোরার সবুজ রঙের কারণ হলো অক্সিজেন আবার অরোরার লাল এবং নীল রঙের জন্য দায়ী হলো নাইট্রোজেন গ্যাস।
অর্থাৎ, বর্তমানে অরোরার রহস্য ততটাও রহস্যময় নয়। বর্তমানে বিজ্ঞান কুসংস্কার থেকে অনেক এগিয়ে আছে। বিজ্ঞান কখনো বলেনা যে অরোরা হলো ইশ্বরের তৈরি আগুনের সেতু বা পূর্বপুরুষের আত্মার নাচানাচি।