করোনাভাইরাস নিঃসন্দেহে এ শতাব্দীতে গোটা পৃথিবীর মানুষের কাছে সবচেয়ে বড় আতঙ্কের নাম। কোনো ধরনের সামরিক যুদ্ধ নয়, নয় কোনো ধরনের পারণবিক অস্ত্র কিংবা নয় কোনো ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ। সামান্য কয়েক ন্যানোমিটারের ক্ষুদ্র এক মাইক্রো-অর্গানিজমের কাছে আজ গোটা পৃথিবী অসহায়। খালি চোখে দেখা যায় না অথচ কোনো এক অদৃশ্য শক্তি রূপেই গোটা পৃথিবীকে সে অচল করে দিচ্ছে এবং বিশ্বের প্রায় সকল দেশ এক হয়েও হিমশিম খাচ্ছে এ ক্ষুদ্র অণুজীবটির কাছে, সমগ্র পৃথিবী যেন আজ মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে শুধু মাত্র এই একটি ভাইরাসের কারণে। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে চীনের উহানে প্রথম শনাক্ত হওয়া এ ভাইরাসটি আজ অ্যান্টার্টিকা ছাড়া গোটা পৃথিবীতেই বিস্তার লাভ করেছে এবং প্রতিনিয়ত মানুষের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করে যাচ্ছে।
কী সেই করোনাভাইরাস যা আসলে মানুষের ঘুম কেড়ে নিয়েছে? করোনা শব্দটি এসেছে ইংরেজি শব্দ "ক্রনিক" থেকে, যার সরল বাংলা অনুবাদ করলে দাঁড়ায় দীর্ঘস্থায়ী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত ন্যাশনাল সেন্টার ফর হেলথ স্ট্যাস্টিকসের পরিভাষায় ক্রনিক বলতে সেই সকল রোগকে বোঝায় যার প্রভাবে কোনো একজন রোগী দীর্ঘ মেয়াদে (ন্যূনতম) কোনো ধরণের শারীরিক জটিলতা ভোগ করে থাকেন কিন্তু আদৌতে তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা যায়ও না। ক্রনিক ডিজিস প্রতিরোধে কোনো ধরণের ভ্যাক্সিনও নেই। উদাহরণস্বরূপ আর্থ্রাইটিসকে আমরা ক্রনিক ডিজিসের সাথে তুলনা করতে পারি। কেননা আর্থ্রাইটিস একটি দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা এবং এখন পর্যন্ত সে অর্থে আর্থ্রাইটিসের সে রকম কার্যকরী চিকিৎসাও নেই।
কিন্তু করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ বিষয়টি ভিন্ন। করোনাভাইরাস মানুষের শরীরে সংক্রমণের সাথে সাথে খুব দ্রুত বিস্তার লাভ করে এবং মানুষের শরীরের ফুসফুস এবং অনেক সময় পাকস্থলিতেও বিশেষ ধরনের প্রদাহ সৃষ্টি করে। করোনাভাইরাসে সংক্রমণে সৃষ্ট রোগের নাম কোভিড-১৯ যার সঠিক চিকিৎসা হয় তো বা এখন পর্যন্ত বের করা সম্ভব হয়নি। এমনকি করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে এখন পর্যন্ত কার্যকরী কোনো ভ্যাক্সিনও আবিষ্কৃত হয়নি। তাই কোভিড-১৯ কে আমরা বিশেষ ধরণের করোনিক ডিজিস বলতে পারি যা খুব দ্রুত সংক্রমিত হয়। যেহেতু এ ভাইরাস টাইপটি আমাদের সকলের কাছে নতুন তাই এ ভাইরাসকে "নোভেল করোনাভাইরাস" অভিহিত করা হয়। আবার যেহেতু এ ভাইরাসটি মানুষের শরীরের শ্বাসতন্ত্রে তীব্রভাবে প্রদাহের সৃষ্টি করে তাই অনেককে একে “Severe Acute Respiratory Syndrome“ বা সংক্ষেপে সার্স -২ ভাইরাস নামে অভিহিত করে থাকেন।
অন্যভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে করোনা ভাইরাসের নামকরণ করা হয়েছে ইংরেজি শব্দ "ক্রাউন" থেকে যার বাংলা প্রতিশব্দ "মুকুট"। ইলেক্ট্রন মাইক্রোস্কোপে এ ভাইরাসটি অনেকটা মুকুটের মতো দেখায় বলে এরকম নামকরণ করা হয়েছে বলে অনেকে দাবি করে থাকেন।
আমাদের শরীরে যখন জ্বর আসে তখনই আমরা ধরে নেই যে আমাদের শরীরে কোনো একটি ইনফেকশন ধরা পড়েছে এবং তাই সাধারণভাবে এ ভাইরাসও যখন মানুষের শরীরে আক্রমণ করে তখন জ্বর আসাটা স্বাভাবিক এবং একইসাথে সর্দি ও কাশির উপসর্গও দেখা যায়। এ কারণে অনেকে এ নোভেল করোনা ভাইরাসকে সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের সাথে তুলনা করেন। কিন্তু বাস্তবিকতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে সাধারণ কোনো ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস যদি সর্বোচ্চ মানের ছোঁয়াচেও হয় তাই একজন মানুষ থেকে সর্বোচ্চ ১২ জন সংক্রমিত হতে পারে। কিন্তু এ নোভেল করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি একসাথে ২৭ কিংবা ২৮ এমনকি একসাথে ৫৭ জনকেও সংক্রমিত করতে পারে।