Alvi Saadman

৩০ নভেম্বর ২০১৯ ১২:০০


বিভাগ: জোতির্বিদ্যা

পড়ার সময়: ২ মিনিট


কৃষ্ণগহ্বর: মহাবিশ্বের এক রহস্যময় বস্তু


যখন একটা নক্ষত্রের সামগ্রিক ভর এতোটাই বেশি হয় যে সেটা বাঁক তৈরি করতে করতে একটা গহ্বর তৈরি করে, তখন সেটাকে কৃষ্ণগহ্বর বলে। কিন্তু আমরা যখন ব্ল্যাকহোলের দিকে তাকাই তখন আমরা আসলে কৃষ্ণগহ্বর দেখি না। যেটা দেখি সেটাকে বলা হয় দ্যা ইভেন্ট হরিজন!

যদি প্রশ্ন করা হয় মহাবিশ্বের সবচেয়ে রহস্যময় বস্তু কোনটি? আমার মতে উত্তরটি হবে কৃষ্ণ গহ্বর। নামটা একটু অপরিচিত লাগতে পারে। কারণ আমরা এখন বাংলা শব্দের চেয়ে তার ইংরেজি প্রতিশব্দ বেশি বুঝি এবং সেগুলো ব্যবহারে অধিক অভ্যস্ত। এজন্যেই ব্ল্যাক হোল বললে সবাই বুঝবো।

নক্ষত্র সৃষ্টির মূল ক্ষেত্র হলো মহাজাগতিক মেঘ বা নেবুলা। নেবুলার অভ্যন্তরের হাইড্রোজেন পরমাণুগুলো ঘনীভূত অবস্থায় নিজেদের অভিকর্ষ বলের ওপর পতিত হয়ে সৃষ্টি করে নক্ষত্র। নক্ষত্রের অভ্যন্তরে নিউক্লিয়ার ফিউশন প্রক্রিয়া হাইড্রোজেনের পরমাণুগুলোকে বিভক্ত হয়ে হিলিয়াম পরমাণুতে রূপান্তরিত হয়। এ প্রক্রিয়ায় বৃহৎ পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন হয়ে থাকে যেটা তেজস্ক্রিয়তার রূপে নক্ষত্রের অভিকর্ষ বলের বিপরীতে প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করে। ফলস্বরুপ নক্ষত্রের অভিকর্ষ শক্তি ও তেজস্ক্রিয়তার ভেতরে এক ধরনের সমতা প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু বৃহৎ নক্ষত্রগুলোর আভ্যন্তরীণ চাপ এবং তাপ হিলিয়ামের পাশাপাশি তুলনামূলক ভারী উপাদান সৃষ্টি করতে থাকে।

যেমন: কার্বন, নিয়ন, সিলিকন, অক্সিজেন, লোহা। যখন এর অভ্যন্তরে লোহা উৎপন্ন হওয়া শুরু করে তখনই আসে অসামঞ্জস্যতা। কারণ যে ফিউশন প্রক্রিয়ায় লোহা উৎপন্ন হয় সেটা কোনো ধরনের শক্তির নিঃসরণ ঘটায় না। এভাবে যখন নক্ষত্রের অভ্যন্তরে লোহার পরিমাণ অত্যাধিক বেড়ে যায় তখন তেজস্ক্রিয়তা এবং অভিকর্ষ বলের সমতা বিনষ্ট হয়। ফলস্বরুপ নক্ষত্রের কেন্দ্র ধ্বংস হয়ে যায়। ধ্বংস হবার ঠিক আগমূহুর্তে সেটা নক্ষত্রের সমস্ত ভর শোষণ করে নেয় এবং সৃষ্টি করে সকল ভারী উপাদানসমূহের। এর পরপরই ঘটে সুপারনোভা যার মাধ্যমে এসকল উপাদান সমগ্র মহাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। সুপারনোভা সংগঠিত হবার পর দুটির যে কোনো একটি ঘটনা ঘটবে:

১। নক্ষত্রটি নিউট্রন নক্ষত্রে পরিণত হবে।

২। ভর আরো বেশি হলে নক্ষত্রটি নিজের ভরের ওপর পতিত হয়ে কৃষ্ণগহ্বর বা কৃষ্ণ গহ্বরে পরিণত হবে।

এখানে উল্লেখ্য যে, নক্ষত্রের ভর বেশি হলে ওপরের দুটো ঘটনার একটি ঘটবে। নক্ষত্রের ভর এদের চেয়ে কম হলে তারা সাদা বামন নক্ষত্রে পরিণত হবে, যেমন আমাদের সূর্য হবে একদিন।

কৃষ্ণগহ্বর কী?

এটি এমন একটি অবস্থা যেখানে নক্ষত্রের সমস্ত ভর একটি বিন্দুতে একীভূত হয়। ফলস্বরুপ এর মহাকর্ষ বল এতোটাই বেশি হয়ে থাকে যে এমনকি আলো পর্যন্ত এটি অতিক্রম করতে পারে না। আমরা জানি, যে কোনো ভরযুক্ত বস্তুই স্থান-কালের চাদরে একটা বক্রতা তৈরি করে। যখন একটা নক্ষত্রের সামগ্রিক ভর এতোটাই বেশি হয় যে সেটা বাঁক তৈরি করতে করতে একটা গহ্বর তৈরি করে, তখন সেটাকে কৃষ্ণগহ্বর বলে।

আমরা যখন ব্ল্যাকহোলের দিকে তাকাই তখন আমরা আসলে কৃষ্ণগহ্বর দেখি না। যেটা দেখি সেটাকে বলা হয় দ্যা ইভেন্ট হরিজন (The Event Horizon)। কৃষ্ণগহ্বরটা থাকে মূলত এর কেন্দ্রে। যার ভেতরে আছে সিঙ্গুলারিটি। সিঙ্গুলারিটি এক্ষেত্রে অসীম ঘনত্বের কোনো পৃষ্ঠ হতে পারে, কিংবা সম্পূর্ণ ভিন্ন কিছু। 

কৃষ্ণগহ্বর কি মহাকাশের ভ্যাকুয়াম ক্লিনার?

এটি একটি ভুল ধারণা। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে কৃষ্ণগহ্বর তার আশেপাশের সবকিছুই শোষণ করে নেয়। তবে এর একটি নির্দিষ্ট অভিকর্ষ বল বিদ্যমান। আপনি যদি সৌরজগতের মাঝখানে সূর্যের বদলে সেটার সমান কোনো কৃষ্ণগহ্বর স্থাপন করেন তাহলে গ্রহগুলোর কক্ষপথের কোনোরুপ পরিবর্তন হবে না। কিন্তু তাপ না থাকার কারণে আমরা ঠাণ্ডায় মারা যাব। প্রতিটি ছায়াপথের কেন্দ্রেই একটি বিশাল কৃষ্ণগহ্বর রয়েছে।

এতে প্রবেশ করলে কী ঘটবে?

সেটা নির্ভর করবে কৃষ্ণগহ্বরের প্রকৃতির ওপর। যদি Stellar Mass Black hole বা ছোট কৃষ্ণগহ্বর হয় তাহলে ঘটনাদিগন্তে প্রবেশ করা মাত্রই তীব্র অভিকর্ষ বলের প্রভাবে আপনার দেহ চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাবে। আর যারা ঘটনাটি পর্যবেক্ষণ করবে তারা দেখতে পারবে আপনি ধীর গতিতে সেখানে প্রবেশ করছেন এবং আপনার দেহ ক্রমশ অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে আলো প্রতিফলিত না হবার কারণে। আর সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোলের ক্ষেত্রে আপনি এর কিছুটা অংশ ভ্রমণ করতে পারবেন। এমতাবস্থায় আপনার চারপাশের সবকিছু প্রচণ্ড গতিতে আপনাকে অতিক্রম করবে। দেখে মনে হবে আপনি যেন টাইমমেশিনে বসে আছেন আর পারিপার্শ্বিক সবকিছুকে অসীম গতিতে অতিক্রম করছেন। এরপর আপনি ডেথজোনে প্রবেশ করবেন এবং পূর্বের ঘটনাটি ঘটবে।

দুইটি কৃষ্ণগহ্বর একত্রিত হলে কী ঘটবে?

তেমন কিছুই ঘটবে না । শুধু একটির ভর অপরটি শোষণপূর্বক তা আরো শক্তিশালী ব্ল্যাকহোলে পরিণত হবে।