পৃথিবীর সৃষ্টি লগ্ন থেকে এ পর্যন্ত হাজারো প্রাণি পৃথিবীতে এসেছে। অনেক প্রাণি বিলুপ্তও হয়ে গেছে। এসব প্রাণীর অস্তিত্ব বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন তাদের ফসিল (ফসিল বা জীবাশ্ম বলতে প্রাণী বা উদ্ভিদ পাথরে পরিণত হয়েছে এমন ধরনের বস্তুকে বোঝায়। প্রাগৈতিহাসিক যুগের উদ্ভিদ ও প্রাণীর ধ্বংসাবশেষ তথা মৃতদেহের চিহ্ন পাওয়া যায় ভূগর্ভ কিংবা ভূ-পৃষ্ঠের কঠিন স্তরে সংরক্ষিত পাললিক শিলা অথবা যৌগিক পদার্থে মিশ্রিত ও রূপান্তরিত অবস্থায়। অধিকাংশ জীবিত প্রাণীকুলেরই জীবাশ্ম সংগৃহীত হয়েছে। এছাড়াও, অনেক প্রজাতিরই জীবাশ্ম আবিষ্কৃত হয়েছে যারা পৃথিবীতে বর্তমানে বিলুপ্ত) থেকে।
তবে নতুন নতুন প্রজাতিগুলো অনায়াসে আবিষ্কৃত হয়ে যায় না, বরং তার জন্য দশকের পর দশক ধরে নিরলস পরিশ্রম করতে হয়। তেমনই একটি ঘটনা হলো আর্মেনিসরাস স্কুবার্টি (Arminisaurus schuberti) এর আবিষ্কার। এটি একটি নতুন আবিষ্কৃত ‘সমুদ্র দানব’ যা প্রাগৈতিহাসিক বা জুরাসিক যুগের মহাসাগরগুলোতে ১৯ কোটি বছর আগে সাঁতরে বেড়িয়েছিলো। এরা প্লেসিওসরাস গোত্রের (শ্বেত হাঙ্গর, তিমি) অন্যান্য প্রাণীর মতো বিশেষ কাঁধের অস্থিযুক্ত, যা হতে এদের গোত্র পরিচয় শনাক্ত করা গেছে।
আর্মেনিসরাসের জীবাষ্মে পরিণত হাড়-গোড় উদ্ধার করা হয় ১৯৮০’র দশকে জার্মানির নিকটবর্তী বিয়েলেফেল্ডের একটি কাদার স্তর হতে। এটি খুঁজে পাওয়ার আগে খনি-যন্ত্রপাতির আঘাতে এর কঙ্কালটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। কেবলমাত্র ৪০ শতাংশ হাড়গোড় উদ্ধার করা যায়।
আশি’র দশকে উদ্ধার হলেও দীর্ঘদিন এটিকে এলোমেলো অবস্থায় ফেলে রাখা হয়। অবশেষে ২০১৫ সালে তরুণ সৌখিন জীবাষ্মবীদ সিগফ্রেড শুবার্ট অধ্যাবসায় নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে হাড়গুলো পরিষ্কার করেন এবং সংরক্ষণের জন্য বিয়েলফেল্ডের নাতুরকুন্ডে যাদুঘরে পাঠান।
প্লেসিওসর জাতীয় এই সমুদ্র দানবের নাম Arminisaurus schuberti রাখা হয় শুবার্টের এবং জার্মানির গোত্রপ্রধান আর্মিনিয়াসের সম্মানার্থে।
গবেষক স্ভেন স্যাকস এই প্রাণি সম্বন্ধে বলেন, “ডায়নোসর যুগের জলচারী শিকারীদের মধ্যে প্লেসিওসর সবচেয়ে সফল হয়েছিলো। এর মধ্যে কিছু প্রাণি, যেমন, বিখ্যাত Liopleurodon রা ছিলো দৈত্যাকৃতির যারা দৈর্ঘ্যে ১৫ মিটার বা ৫০ ফুট পর্যন্ত হতে পারত। তারা বর্তমানের সমুদ্রের শ্বেত হাঙ্গর (white shark) কিংবা খুনি তিমি (killer whale)’র সাথে তুলনীয়।”
তবে আর্মেনিসরাস এদের মধ্যে ক্ষুদ্র প্রজাতির, মাত্র ৩ থেকে ৪ মিটার বা ১০ থেকে ১৩ ফুট দীর্ঘ এবং সম্ভবতঃ অপেক্ষাকৃত ছোট আকৃতির প্রানী যেমন: মাছ বা স্কুইড শিকার করত। তবে এরা প্লেসিওসরাস গোত্রের অন্যান্য প্রানীর মতো বিশেষ কাঁধের অস্থিযুক্ত, যা হতে এদের গোত্র পরিচয় শনাক্ত করা গেছে।
এই আবিষ্কার জীবাষ্মবীদদের প্লেসিওসরজাতীয় সমুদ্র দানবদের বিবর্তীয় ধারা বিষয়ক জ্ঞান বহুলাংশে বৃদ্ধি করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।