সুইমিংপুলের পানি মোটামুটি পরিষ্কার। কেউ ডুব সাঁতার কাটছে আপনি পাড়ে দাঁড়িয়ে থেকে পানির নিচে তাকে দেখতে পাবেন সহজেই। কিন্তু আপনি পানির ভেতরে ডুব দিয়ে চোখ খুলে দেখার চেষ্টা করলে আবছা কিছু ছায়া ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাবেন না। অর্থাৎ আমাদের চোখ পানির ওপর থেকে পানির ভেতরের জিনিস দেখতে পেলেও পানির ভেতরে থেকে দেখতে পারে না। পানি এবং চোখের লেন্সের প্রতিসরাঙ্ক প্রায় সমান বলেই এ রকম হয়।
বিষয়টি একটু ব্যাখ্যা করা যাক- আলো যখন হাল্কা বা ঘন মাধ্যম থেকে অন্য একটি ঘন বা হাল্কা মাধ্যমে প্রবেশ করে তখন আলোকরশ্মি বেঁকে যায় বা প্রতিসরিত হয়। এ সময় আপতন বিন্দুতে লম্বরেখার সঙ্গে সৃষ্ট আপতন কোণ ও প্রতিসরণ কোণের সাইন-এর অনুপাত ওই দুই মাধ্যমের জন্য একটি ধ্রুব রাশি।
আলো শূন্য মাধ্যম থেকে অন্য মাধ্যমে প্রবেশের ক্ষেত্রে এই ধ্রুব রাশিকে বলা হয় আলোর প্রতিসরাঙ্ক। চোখের কর্নিয়া ও জলীয় অংশের প্রতিসরাঙ্ক ১.৩৪ এবং চোখের লেন্সের প্রতিসরাঙ্ক ১.৪৩। কোনো বস্তু থেকে আলোকরশি চোখের কর্নিয়া, জলীয় অংশ ও লেন্সে প্রতিসরিত হয় এবং পেছনের রেটিনায় কেন্দ্রীভূত হয় (ফোকাস)। মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট অংশে এর খবর যখন পৌঁছায় তখন আমরা ওই বস্তু দেখতে পাই। কিন্তু পানির ভেতরে থেকে দেখতে গেলেই সমস্যা হয়। কারণ, পানির প্রতিসরাঙ্কও ১.৩৪ (চোখের লেন্সের কাছাকাছি)। ফলে পানির ভেতর থেকে আসা আলোকরশি চোখে প্রতিসরিত হয় না। এর ফোকাস পড়ে রেটিনার পেছনে। ফলে কোনো বস্তুকে ঝাপসা দেখায়, স্পষ্ট দেখা যায় না। কিন্তু মাছ পানির ভেতরে দেখতে পায়, কারণ তাদের চোখের লেন্সের প্রতিসরাঙ্ক খুব বেশি।
অবশ্য ডুবুরিরাও পানির নিচে দেখতে পায়. তবে এ জন্য বিশেষ ধরনের মুখোশ কিংবা চশমা ব্যবহার করতে হয়। এর ফলে চোখ ও পানির মধ্যে ফাঁকা অংশের সৃষ্টি হয়। পানির মধ্য থেকে আলোকরশ্মি প্রথমে বাতাস ও পরে চোখের লেন্সের মধ্য দিয়ে যায় এবং তখন মোটামুটি দেখা যায়।