Alvi Saadman

০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২০ ১২:০০


বিভাগ: পুষ্টিবিজ্ঞান

পড়ার সময়: ২ মিনিট


পুষ্টির সহজ উৎস হতে পারে তেঁতুলপানা


উদ্ভিদ বিজ্ঞানী ক্লাউস আপেনরোট কিন্তু খাদ্য হিসেবে এই উদ্ভিদের গুণাগুণ নিয়ে মুগ্ধ৷ তার কাছে এই উদ্ভিদ হলো ‘মিব়্যাকল প্লান্ট' – অর্থাৎ অসাধারণ গুণসম্পন্ন এক গাছ৷ উদ্ভিদ বিজ্ঞানী ক্লাউস আপেনরোট বলেন, ‘‘ডাকউইড গোত্রের সব উদ্ভিদই অবহেলিত৷ অথচ মানুষের পুষ্টির ক্ষেত্রে এগুলি অভাবনীয় অবদান রাখতে পারে৷''

খাদ্য হিসেবে কচুরিপানার কথা ভাবা যেতে পারে কি? কচুরিপানা জাতের যেটা ক্ষুদ্র, বিজ্ঞানীরা বলছেন, সেই ক্ষুদিপানা বা তেঁতুলপানা কিন্তু অত্যন্ত পুষ্টিকর খাদ্য হয়ে উঠতে পারে৷ জার্মানির বিজ্ঞানীরা ডাকউইড চাষ ও খাদ্য হিসেবে তা প্রচলনের লক্ষ্যে কাজ করছেন৷

আকারে ছোট, ছায়া পেলেই জলাশয়ের উপর ছড়িয়ে পড়ে ৷ পুকুর মালিক মাত্রই ঘৃণা করেন৷ কারণ এগুলির দ্রুত বংশবৃদ্ধি ঘটে৷ ক্ষুদিপানা বা তেঁতুলপানা নামেই এই উদ্ভিদ বেশি পরিচিত৷ ইংরেজি ভাষায় তার পোশাকি নাম ডাকউইড৷

উদ্ভিদ বিজ্ঞানী ক্লাউস আপেনরোট কিন্তু খাদ্য হিসেবে এই উদ্ভিদের গুণাগুণ নিয়ে মুগ্ধ৷ তার কাছে এই উদ্ভিদ হলো ‘মিব়্যাকল প্লান্ট' – অর্থাৎ অসাধারণ গুণসম্পন্ন এক গাছ৷ উদ্ভিদ বিজ্ঞানী ক্লাউস আপেনরোট বলেন, ‘‘ডাকউইড গোত্রের সব উদ্ভিদই অবহেলিত৷ অথচ মানুষের পুষ্টির ক্ষেত্রে এগুলি অভাবনীয় অবদান রাখতে পারে৷''

ক্লাউস আপেনরোট-এর কাছে বিশ্বের অন্যতম বিশাল ডাকউইড উদ্ভিদের সংগ্রহ রয়েছে৷ তার গবেষণাগারে প্রায় ৫০০ পরিচিত প্রজাতির উদ্ভিদ বেড়ে উঠছে৷ সাধারণত সেগুলির মধ্যে এক ধরনের ফাঁপা পাতা থাকে৷ ফলে সেই উদ্ভিদ পানির উপর ভাসতে পারে৷

মাত্র এক দিনের মধ্যেই এর আকার দ্বিগুণ হতে পারে৷ ক্লাউস আপেনরোট এক গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার করেছেন৷ তিনি বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘‘সব ডাকউইড প্রজাতির মধ্যে প্রোটিনের পরিমাণ অত্যন্ত বেশি, শুকনো অবস্থায় যা প্রায় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ৷ কিন্তু তার মান আরও বিস্ময়ের কারণ৷ কারণ অ্যামিনো অ্যাসিডের মধ্যে উপাদানগুলির অনুপাত খুবই ভালো৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যেমনটা পরামর্শ দিয়ে থাকে৷''

ডাকউইড-এর মাধ্যমে ভারতের খাদ্য ও পুষ্টি সংক্রান্ত সমস্যাগুলির সমাধানের লক্ষ্যে ক্লাউস আপেনরোট সে দেশের বিজ্ঞানীদের সঙ্গে কাজ করছেন৷ গবেষকরা প্রোটিন-সমৃদ্ধ নির্দিষ্ট কয়েকটি প্রজাতির মধ্যে পরিকল্পিত প্রজননের মাধ্যমে ফ্যাটি অ্যাসিডের অনুপাতও বাড়াতে চান৷

থাইল্যান্ড ও লাওসে বেশ কয়েক শতাব্দী ধরে খাদ্য হিসেবে ডাকউইড কাজে লাগানো হয়৷ জার্মানিতে না হলেও ভারতে সারা বছর ধরেই খোলা আকাশের নীচে ডাকউইড চাষ করা সম্ভব৷ ক্লাউস আপেনরোট বলেন, ‘‘এখানে একাধিক সমস্যা রয়েছে৷ প্রথমত এখানে একটাই মৌসুম রয়েছে৷ অর্থাৎ মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে আগস্টের শেষ, কখনো সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত ডাকউইড চাষ করা যায়৷ শীতকালে খোলা আকাশের নীচে চাষ করা সম্ভব নয়৷''

তাছাড়া পার্মাকালচার বা টেকসই কৃষি মুক্ত প্রকৃতির মাঝে ডাকউইড ক্ষতিকারক পদার্থ নিঃসরণ করে এবং অনেক জায়গা দখল করে৷ ডাকউইড যেখানে গজায়, সেখানে অন্য কোনো উদ্ভিদ টিকতে পারে না৷

জার্মানির কালকার শহরের দুই বিশেষজ্ঞ এই সমস্যার সমাধান করতে চান৷ এক পদার্থবিজ্ঞানী ও এক উদ্ভিদ প্রজননকারী গ্রিনহাউসে ডাকউইড উৎপাদন করতে এক অসাধারণ প্রকল্পে অংশ নিচ্ছেন৷ পদার্থবিজ্ঞানী হিসেবে কার্ল মিশায়েল স্মিট বলেন, ‘‘তিনি বলেন, আমি গাদা করে ডাকউইড রাখতে পারি৷ পানিতে যত বেশি আয়রন চেলেট দেবো, বৃদ্ধি ততই ভালো হবে৷ সেটা অবশ্যই আয়রন, সালোকসংশ্লেষ পদ্ধতি ও লো লাইট টলারেন্সের সমন্বয়ে এই প্রভাব দেখা যায়৷ এমন প্রভাবের কথা শুনে পদার্থবিজ্ঞানী হিসেবে আমি বিশাল উৎসাহ পেয়ে এই প্রকল্পে জড়িয়ে পড়ি৷''