মীর তাফহীম মাহমুদ

১৪ জানুয়ারি ২০১৫ ১২:০০


বিভাগ: প্যারাসাইকোলজি

পড়ার সময়: ২ মিনিট


বোবা জ্বীন বা বোবায় ধরা কী?


‘বোবা জ্বীন’ বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে একটি গল্প মাত্র।

বোবা জ্বীন কী?

প্রথমেই আমি বোবা জ্বীন সম্পর্কে কিছু কথা বলতে চাই।

আমরা যারা গ্রামে বাস করি তারা অনেকেই হয়তো মা-বাবা, দাদা-দাদী, নানা-নানীর কাছ থেকে শুনে থাকবে আমরা যখন অর্ধঘুম অবস্থায় থাকি তখন আমাদের পায়ের বৃদ্ধ আঙ্গুল যদি একসাথে লেগে যায় এবং নাক যদি আঙ্গুল দুটির মাঝখান বরাবর থাকে তখন নাকি কোনো এক ধরনের ‘জ্বীন’ আমাদের গলা টিপে এসে ধরে। আর আমরা সে সময় কথা বলতে পারি না। চিৎকার-ও করতে পারি না। নড়চড়ও করতে পারি না। কারণ বোবা জ্বীনের নাকি অনেক শক্তি! আবার এই সময় যদি কোনো মানুষ এসে ধরে তখন নাকি এই বোবা জ্বীন চলে যায়।

বিজ্ঞান এ সম্পর্কে কী বলে?

আমি অনেক খোঁজ নিয়েও জানতে পারলাম না যে বিজ্ঞান ‘বোবা জ্বীন’ সম্পর্কে কী বলে? তারপর আমি নিজেই এই সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক যুক্তি তৈরি করতে শুরু করলাম এবং, অনেক গবেষণা করে পেয়েও গেলাম। নিচে আমার তৈরি ‘বোবা জ্বীন’ এর বৈজ্ঞানিক যুক্তি দেওয়া হলো-   

‘বোবা জ্বীন’ এটা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে একটি গল্প মাত্র। এটা আমাদের মনের ভুল থেকে হয়। আমি-ও এরকম অনেক চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু আমাকে বোবা জ্বীন ধরেনি।

এই ‘বোবা জ্বীন’ দেখার কারণ হলো আমাদের মস্তিষ্ক। আমরা যখন অনেক ক্লান্ত হয়ে পড়ি তখন আমাদের বিশ্রাম নিতে হয়। আর আমাদের মস্তিষ্ক ক্লান্ত অবস্থায় যত সব আজেবাজে চিন্তা করে।

আমরা যখন ক্লান্ত হয়ে পড়ি আমাদের তখন আজেবাজে চিন্তার মধ্যে বোবা জ্বীনও একটি।

আমরা ক্লান্ত হওয়ার পর শুলে আমাদের মস্তিষ্ক যদি বোবা জ্বীন সমপর্কে কোনো তথ্য জানে তখন সেটাকে অনেক বড় ভাবে চিন্তা করতে শুরু করে। আর এই সময় আমাদের মস্তিষ্কের অংশ ‘এমিগডালা’ কাজ করতে শুরু করে।

এমিগডালা:

মস্তিষ্কের একটি অংশ এমিগডালা। এর কাজ হলো মানুষের ভীতিমূলক চিন্তাধারায় সাড়া দেওয়া। অর্থাৎ আমরা যখন ভয় পাই তখন এই ‘এমিগডালা’ কাজ করে। আমরা ভয়ঙ্কর কোনো জিনিস দেখলে অথবা চিন্তা করলে আমাদের ‘এমিগডালা’ মস্তিষ্কে এক ধরনের ‘হরমোন’-এর জোয়ার ভাসিয়ে দেয়। যার ফলে আমাদের ‘শর্ট টাইম মেমরি’ অথবা ‘সংক্ষিপ্তকালীন স্মৃতি’ মুছে যায়।

শর্ট টাইম মেমরি:

শর্ট টাইম মেমরির কথা শুনেই এর সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। এটি হচ্ছে এক ধরনের স্মৃতি যা মস্তিষ্কে স্বল্প সময় থাকে। এর কাজ হচ্ছে পরবর্তীতে কী পদক্ষেপ নিতে হবে তা পুরো শরীরকে জানানো।

আমরা যখন বোবা জ্বীন সম্পর্কে ভাবি, তখন আমাদের মস্তিষ্ক এই বোবা জ্বীনের কাল্পনিক ছবি আমাদের সামনে তৈরি করে।

কারণ আমাদের মস্তিষ্ক সবসময়-ই কল্পনাকে নিজে নিজে একটি রূপ/দৃশ্য দেওয়ার চেষ্টা করে।

আমদের মস্তিষ্ক যখন বোবা জ্বীনের একটি দৃশ্য নিজে নিজে তৈরি করে নেয় সে সময় আমাদের মস্তিষ্কের ‘এমিগডালা’ কাজ করা শুরু করে। কারণ আমরা তখন ভয় পাই। এই এমিগডালা থেকে এক ধরনের ‘হরমোন’ নিঃসৃত হয় যা আমদের ‘শর্ট টাইম মেমরি’-কে মুছে দেয়। তখন আমরা পরবর্তীতে কী পদক্ষেপ নেব তা আর বুঝতে পারি না। তাই আমরা তখন নড়চড় ও চিৎকার করতে পারি না।

এ সময় কেউ এসে যদি আমাদের ধরে তখন আমাদের স্নায়ুগুলো মস্তিষ্কে সঙ্কেত পাঠায় আর আমাদের ‘এমিগডালা’ ধীরে ধীরে তার কাজ বন্ধ করে দেয়। আর এটাই হচ্ছে ‘বোবা জ্বীন’ এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা।

এই ‘বোবা জ্বীনের’ ঘটনা তাদের সাথেই ঘটে যারা এ সম্পর্কে জানে। যারা বোবা জ্বীনের কথা কখনো শুনেনি তাদের সাথে এটা ঘটে না। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় বোবা জ্বীন একটি গল্প মাত্র।