এক শতকেরও বেশী সময় ধরে আমরা জানি আলো ও বস্তু/পদার্থ সমতুল। আইনস্টাইন E = mc^2 সমীকরণের মাধ্যমে এই তত্ত্ব প্রতিষ্ঠত করে গেছেন। এতদিন পর্যন্ত এই সমতুলতা একমুখীই ছিলো। অর্থাৎ নানাবিধ নিউক্লিয় প্রক্রিয়ায় বস্তুকে শক্তিতে পরিণত করা হয়েছে। পারমানবিক বোমা কিংবা বিদ্যুৎকেন্দ্রে এভাবেই বস্তু রূপান্তরিত হয় বিকিরণের মাধ্যমে, তাপ শক্তিতে। তবে এর বিপরীত প্রক্রিয়াটি, অর্থাৎ শক্তিকে বস্তুতে রূপান্তরিত করার বিষয়টি এখনো দুরুহ।
তবে শেষ পর্যন্ত অপেক্ষার প্রহর শেষ হতে চলল। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী লেজার রশ্মিটির নকশা তৈরি করা হয়েছে এবং বিভিন্ন দেশে এটি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রাশিয়া ও চীনের তিনটি প্রতিষ্ঠান এই লেজারগুলো তৈরি করবে।
এই তিনটি লেজার রশ্মি অদ্যবধি তৈরি লেজারের শক্তিমত্তার রেকর্ড বিপুলভাবে পরাস্ত করবে। বর্তমানে সবচেয়ে শক্তিশালী লেজারের ক্ষমতা ৫.৩ পেটা ওয়াট তথা ৫.৩ মিলিয়ন বিলিয়ন ওয়াট। এটি তৈরি করেছেন সাংহাই আলট্রা ফাস্ট লেজার ফ্যাসিলিটির রুক্সিন লি এবং তাঁর সহকর্মীবৃন্দ। লি নতুন পরিকল্পনাকৃত লেজারটি তৈরি সাথেও জড়িত আছেন যার ক্ষমতা হবে ১০০ পেটা ওয়াট!
রাশিয়ান পরিকল্পনার লেজার এখনো নকশা প্রণয়নের পর্যায়ে আছে তবে এটি হবে আরো শক্তিশালী। তাদের লেজারটি ১৮০ পেটাওয়াট ক্ষমতার হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই লেজারগুলোকে একীভুত করে একটি অত্যন্ত শক্তিশালী লেজার বীম তৈরি করা হয়। আর যেহেতু এরা পরস্পর হতে বেশ দূরে দূরে অবস্থিত তাই এদেরকে একীভূত করতে অত্যন্ত নিখুঁত অবস্থানে বসাতে হবে। খুব সামান্য পরিমাণ কম্পন কিংবা অযথার্থতাও সম্মিলিত লেজার বিমটিকে অকার্যকর করে দিতে পারে।
এই তীব্র লেজারের শক্তিতে আলোক রশ্মি ইলেক্ট্রন-পজিট্রনের একজোড়া ম্যাটান-এ্যান্টিম্যাটারে পরিণত হবে। যেই পদ্ধতিতে এই ঘটনা ঘটানো হবে তা খুবই চমৎকার। লেজার রশ্মিটিকে প্রথমে হিলিয়াম নিশানায় তাক করে কিছু ইলেক্ট্রন বিচ্ছিন্ন করা হবে। বিমের কিছু আলোর কণিকা অর্থাৎ ফোটন ইলেক্ট্রনগুলোর সাথে ধাক্কা খেয়ে অন্য ফোটনগুলোর সাথে সংঘর্ষ ঘটাবে এর ফলে এরা ইলেক্ট্রন-পজিট্রন জোড়ে পরিণত হবে।
যদি এই প্রক্রিয়াটি সফলভাবে নিস্পন্ন করা যায় তাহলে কণা পদার্থবিজ্ঞানের বড় ধরনের অগ্রগতি হবে। এই প্রযুক্তি গতানুগতিক কণিকাত্বরণযন্ত্রগুলোকে প্রতিস্থাপন করবে এবং আরো সাশ্রয়ী হয়ে উঠবে।