Alvi Saadman

২৮ ডিসেম্বর ২০১৯ ১২:০০


বিভাগ: সমুদ্রবিজ্ঞান

পড়ার সময়: ২ মিনিট


সাগরতলে নতুন জগৎ


ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা এন্টার্কটিকা মহাদেশে সাগরের আট হাজার ফুট তলদেশে আরেকটি পৃথিবী আবিষ্কারের দাবি করেছেন। সেখানে বেশ কিছু নতুন প্রজাতির জলজ প্রাণির সন্ধানও মিলেছে বলেও দাবি তাদের।

এই বিশ্বজগতের নানা জায়গায় রয়েছে নানা রহস্য। রয়েছে নানা অজানা বিষয়। অনেক কিছুই রয়ে গেছে লোকচক্ষুর আড়ালে। অজানাকে জানতে দুনিয়াজুড়ে চলছে নানা অনুসন্ধান। চলছে বিস্তর গবেষণা। এরকমই একটি বিষয় জীব জগৎ। পৃথিবীর ও পৃথিবী বাইরে আর কোথাও জীব জগৎ আছে কিনা সেটা খুঁজে বের করার জন্য বিজ্ঞানীরা গভীর অনুসন্ধান করে যাচ্ছেন।

এই অনুসন্ধান করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা আরও নতুন বিভিন্ন আশ্চর্যজনক তথ্যের সন্ধান পাচ্ছেন। যার অংশ হিসেবে সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা সমুদ্রের তলায় আরেক পৃথিবীর সন্ধান পেয়েছেন।

ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা এন্টার্কটিকা মহাদেশে সাগরের আট হাজার ফুট তলদেশে আরেকটি পৃথিবী আবিষ্কারের দাবি করেছেন। সেখানে বেশ কিছু নতুন প্রজাতির জলজ প্রাণির সন্ধানও মিলেছে বলেও দাবি তাদের। অক্সফোর্ড ও সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয় এবং ব্রিটিশ এন্টার্কটিক সার্ভের একটি দল এই পৃথিবীটি আবিষ্কারের দাবি করেছে।

বিজ্ঞানীরা জানান, সেখানে আগ্নেয় উদগীরণের উত্তপ্ত পরিবেশের মধ্যেই বেঁচে আছে অনেক নতুন প্রজাতির জীব। সাগরের তলদেশে কাঁকড়া, অক্টোপাস ও তারামাছের নতুন প্রজাতির সন্ধান পাওয়া গেছে।

সাগরের ৮ হাজার ফুট তলদেশে গাঢ় অন্ধকারে প্রাণির অস্তিত্ব টিকে থাকা প্রসঙ্গে বিজ্ঞানীরা জানান, সাগরের নিচে আগ্নেয়গিরি রয়েছে। ওই আগ্নেয়গিরি থেকে মাঝেমধ্যে কালো ধোঁয়া বের হয়। ওই জায়গায় সাগর তলদেশের ফুটো দিয়ে পৃথিবীর ভিতর থেকে অনবরত উত্তপ্ত কালো ধোঁয়া বের হচ্ছে, তাপমাত্রা ৩৮০ সেন্টিগ্রেড। এই তাপমাত্রায় যেখানে সিসাও গলে যায় সেখানে ওই পরিবেশে বাস করছে জীব।

বিষয়টি অত্যন্ত বিস্ময়কর ও অবিশ্বাস্য। সূর্যের আলো সাগরের ওই গভীরে প্রবেশ করে না। ফলে নিকষ অন্ধকারের মধ্যেই ওই প্রাণিগুলো বসবাস করে। প্রাণিগুলো পৃথিবীর অভ্যন্তর থেকে বের হওয়া ধোঁয়ার অতি বিষাক্ত রাসায়নিক ভেঙে তাদের খাদ্য তৈরি করে। প্রাণিগুলো এই ঘুটঘুটে অন্ধকারেই বেঁচে থাকে। বেঁচে থাকার মতো শক্তিও পায় আগ্নেয়গিরি থেকে বের হওয়া গ্যাস থেকে।

বিজ্ঞানীদের মতে, গ্যাসের মাধ্যমে অনেক রাসায়নিক পদার্থ বের হয়, যা প্রাণিগুলোর জন্য ইতিবাচক পরিবেশ বজায় রাখতে সহায়ক। আবিষ্কারকরা জানিয়েছেন, তারা এন্টার্কটিকার উপকূলে অভিযান চালানোর সময় ওই বিশ্বের সন্ধান পান। সেখানে নিকষ অন্ধকার আর পৃথিবীর অভ্যন্তর থেকে বের হওয়া ধোঁয়া-কাদার নোংরা উত্তপ্ত পরিবেশের মধ্যে সামুদ্রিক কাঁকড়া, অক্টোপাস ও তারামাছের নতুন একটি প্রজাতি নিশ্চিন্তে বসবাস করছে।

বিজ্ঞানীরা জানান, সেখানে প্রায় ২৪ রকমের নতুন ধরনের প্রজাতি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ‘ইয়েতি কাঁকড়া’ নাম দেওয়া এক ধরনের কাঁকড়ার সন্ধান পাওয়া গেছে। এসব কাঁকড়া দৈর্ঘ্যে প্রায় ১৬ সেন্টিমিটার।

সাধারণ কাঁকড়ার সঙ্গে এই কাঁকড়াগুলোর পার্থক্য হলো- এদের বুকে একজাতীয় লোম জন্মে। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন এই প্রজাতির কাঁকড়াগুলো তাদের বুকের লোমে জন্মানো ব্যাকটেরিয়া খেয়ে বেঁচে থাকে। বিজ্ঞানীরা নতুন এক প্রজাতির অক্টোপাস দেখেছেন বলেও দাবি করেছেন। তারা জানান, সেখানে শামুক জাতীয় প্রাণি, তারামাছ ও নলের মতো দেহবিশিষ্ট কর্ষিকাযুক্ত এক ধরনের প্রাণিও দেখা গেছে। এই প্রাণিগুলো শনাক্ত করতে বিজ্ঞানীরা ‘রিমোটলি অপারেটেড ভেহিকল’ ব্যবহার করেন।

 

বিজ্ঞানী দলের প্রধান অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আলেক্স রজার্স বলেন, ‘আমরা এমন কিছু প্রাণি সত্তার সন্ধান পেয়েছি, যা এই গ্রহে আগে কখনোই দেখা যায়নি। সাগরের তলদেশ সম্পর্কে আমাদের জানাশোনার অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে। আমরা নিশ্চিত, সেখানে অনুসন্ধানের পর আরও কিছু নতুন প্রাণির সন্ধান মিলবে।’