Md. Golam Rabbani Dukhu Mia

২৭ নভেম্বর ২০১৯ ১২:০০


বিভাগ: ভার্চুয়াল রিয়েলিটি

পড়ার সময়: ৩ মিনিট


ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কি?


ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হলো সফটওয়্যার নির্মিত একটি কাল্পনিক পরিবেশ, যা ব্যবহারকারীর কাছে বাস্তব জগৎ হিসেবে বিবেচিত হয়। এর মাধ্যমে মানুষ কাল্পনিক জগতে ঢুকে বাস্তব জীবনের মতোই স্নায়ুবিক ও শারীরিক অনুভূতির স্বাদ পান।

প্রকৃত অর্থে বাস্তব নয় কিন্তু বাস্তবের ধারণা সৃষ্টি করতে সক্ষম বিজ্ঞান নির্ভর কল্পনাকে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি বা অনুভবের কিংবা কল্পনার জগতে বাস্তবতা বলে। এভাবেও বলা যায়, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হলো সফটওয়্যার নির্মিত একটি কাল্পনিক পরিবেশ, যা ব্যবহারকারীর কাছে বাস্তব জগৎ হিসেবে বিবেচিত হয়।

অর্থাৎ, এটি এক ধরনের কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা যাতে প্রতিমা নির্মাণ (Modelling) ও ছদ্মায়ন (Simulation) পদ্ধতি ব্যাবহারের মাধ্যমে মানুষ কল্পনার জগতে প্রবেশ করতে পারে। ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে মানুষ যা দেখে তা অনুভব করতে পারে, ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে সৃষ্ট পরিবেশ পুরোপুরি বাস্তব পৃথিবীর মতো মনে হতে পারে।

ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ব্যবহার সম্পূর্ণ কম্পিউটিং সিস্টেম নিয়ন্ত্রিত। কল্পনার জগতটাকে যেন হুবহু বাস্তব মনে হয়। এক্ষেত্রে অনেক সময় অপ্রকৃত বাস্তবতা থেকে বাস্তব অভিজ্ঞতা পাওয়া যায়।

ভর্চুয়াল রিয়েলিটিতে কিছু স্পেশাল ডিভাইস ব্যবহার করে নিতে হয় যেমন VR Headset, VR Gloves, VR Suit, Headphones, ইত্যাদি। এ সব ব্যাবহারের ফলে ব্যবহারকারী কোনো শারীরিক ঝুঁকি ছাড়াই বাস্তব এক ধরনের অভিজ্ঞতার স্বাদ গ্রহণ করে। হাতের সঙ্গে সংযুক্ত গ্লোভস দ্বারা প্রয়োজনীয় কমান্ড বা নির্দেশ দেয়া হয় এবং সঙ্গে প্রয়োজনীয় দৃশ্যের অবতারণা, চিত্র এবং কোনো কাজের নির্দেশ বাস্তবায়ন করে ব্যবহারকারীকে কল্পনার এক অন্য জগতে নিয়ে যায়।

ভার্চুয়াল রিয়েলিটির গুরুত্বপূর্ণ তিনটি বিষয় হচ্ছে “দৃষ্টি, শব্দ ও স্পর্শ”। কল্পনার জগতের সবকিছু দেখতে, শুনতে ও অনুভব করতে এই তিনটি উপাদান ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ক্ষেত্রে সব চাইতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

ছোট বেলায় একটা কার্টুন দেখেছিলাম “দ্যা অ্যাডভেঞ্চারস অব জনি কোয়েস্ট”। সেখানে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির জগতে গিয়ে বিভিন্ন মিশন সম্পন্ন করতে হত। যদি না দেখে থাকো তাহলে ম্যাট্রিক্স সিরিজের মুভি গুলো অবশ্যই দেখে নেবে। সেখানে নায়ক নিও কিভাবে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির জগতে প্রবেশ করে এবং সম্পূর্ণ বাস্তবের মতো অনুভূতি নিয়ে মিশন সম্পন্ন করে তা উপভোগ করেছিলো। গেমিংয়ের জগতে এই ভার্চুয়াল রিয়েলিটি বেশ আগেই এসেছে। তবে এতদিন এটার খুব একটা উন্নতি হয়নি।

মাইকেল হাইম তার বিখ্যাত গ্রন্থ দ্য মেটাফিজিক্‌স অব ভার্চুয়াল রিয়ালিটি ("The Metaphysics of Virtual Reality, "অপ্রকৃত বাস্তবতার অধিবিদ্যা") গ্রন্থে সাতটি ভিন্ন ধারণার কথা নির্দিষ্ট করেছেন ৷ যেমন:-

  1. ছদ্মায়ন (simulation)
  2. মিথস্ক্রিয়া (interaction)
  3. কৃত্রিমতা (artificiality)
  4. নিমজ্জন (immersion)
  5. কৃত্রিম ত্রিমাত্রিক জগৎ বা দূর-উপস্থিতি (telepresence)
  6. সমগ্র দেহের নিমজ্জন (full-body immersion)
  7. নেটওয়ার্ক সংযুক্তি (network communication)

অ্যামেরিকান সিনেমাটোগ্রাফার ১৯৭০ এরদিকে “মর্টন হিলিগ” (Morton Hilig) দর্শকদের জন্য এমন এক ধরনের সিনেমা প্রযুক্তির কথা চিন্তা করলেন যা তাদের সিনেমা দেখার অনুভূতিকে আরও বাড়িয়ে দেবে, দর্শককে নিয়ে যাবে কাহিনীর ভেতরে। নিজের ধারণাকে ১৯৫৭ সালে ‘সেন্সোরামা’ আবিষ্কারের মাধ্যমে বাস্তবে রুপ দেন তিনি। যন্ত্রটি একই সঙ্গে সর্বোচ্চ চারজন ব্যবহার করতে পারত।

থ্রিডি মোশনের সঙ্গে তিনি ঘ্রাণ, স্টেরিও সাউন্ড, সিটের অবস্থান আর বাতাসে চুল ওড়ার মতো ব্যাপারগুলোর বিন্যাস ঘটিয়েছিলেন। ফলে দর্শক পর্দার সাথে নিজেকে নিবিড়ভাবে যুক্ত করতে পারতো অনুভবের মাধ্যমে। হিলিগের সেই অসাধারণ উদ্ভাবনের জন্য তাকে ‘ভার্চুয়াল রিয়েলিটি’ র জনক বলা হয়ে থাকে।

তবে সুদীর্ঘ গবেষণার পর ২০১০ সালে সর্বপ্রথম প্রথম স্টেবল VR সেট তৈরি করা হয়। এর থেকে সহজেই বোঝা যায় এই প্রযুক্তিটি এখনো অনেক বেশি নতুন। এতটাই নতুন যে ভার্চুয়াল রিয়েলিট সম্পর্কে ধারণা আমাদের দেশে ২.৫ % মানুষের মধ্যেও নেই।

মাইক্রোসার্জারি, থোরাসিক আর ল্যাপ্রোস্কোপিক সার্জারিতে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি বলা যায় এক আশীর্বাদের নাম। খুব অল্প সময়েই নবীন চিকিৎসকদের এর মাধ্যমে দক্ষভাবে প্রশিক্ষিতকরা যাচ্ছে। ইঞ্জিনিয়ারিং বা অ্যাপ্লাইড সাইন্সের ব্যয়বহুল ল্যাবের খরচ কমিয়ে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে গভীরভাবে শিক্ষার্থীরা সমস্যার সমাধান করতে পারছে। বিশেষ করে পরিকল্পনা বা স্থ্যপাত্যে এর ব্যবহার বহুমুখী। ভূগোল কিংবা প্রাণিবিদ্যার ক্লাস গুলোতেও ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহারের কারণে ক্লাস হয়ে উঠছে জীবন্ত। এমনকি ইতিহাসের ক্লাসে ফিরে যাওয়া যাচ্ছে পুরাতন দিনের দৃশ্যে। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি যেহেতু দৃশ্যের অবতারণা করে, তাই বলা যায় মুখস্তের দিন ফুরিয়েই গেল যেন শিক্ষাথীদের কাছ থেকে, কম্পিউটার গেমস বা চলচিত্রে এর ব্যবহার এতই বিস্তৃত যে, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ছাড়া এসব আর ভাবাই যায় না এখন।

ভার্চুয়াল রিয়ালিটি এই প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে গুগোলও বের করেছে সাধারণ কার্ডবোর্ড। এই কার্ডবোর্ড দিয়ে তৈরি চোখে পরার উপযোগী একটি ডিভাইস, তাও খুবই কম দামে। এতে যে কোনো স্মার্টফোন ঢুকিয়ে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির স্বাদ নেয়া যাবে।কার্ডবোর্ড দিয়ে তৈরি হাল্কা এই ডিভাইসে আছে দু’টি বিশেষ লেন্স যা চোখের সামনে বড় পর্দার অনুভূতি সৃষ্টি করে। দুটি গোল চুম্বক, যা মোবাইলের ম্যাগনেটিক সেন্সর কে ট্রিগার করে, কন্ট্রোলার হিসেবে কাজ করে।

বাস্তব জীবনে অধিকাংশ জিনিসেরই মতো ভার্চুয়াল রিয়েলিটির কিছু মন্দ দিকও এখন সামনে আসছে। যেসব ব্যক্তি এসব ভার্চুয়াল জগতের মাধ্যমে নেতিবাচক পরিবেশের মাঝে সময় কাটাচ্ছেন বা বিনোদন খুঁজছেন, তাদের বাস্তব জীবনেও এর প্রভাব পড়তে পারে। মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি সাইবার এডিকশনের মাত্রা বাড়াচ্ছে। খুন, সহিংসতা, যৌনতা ইত্যাদি বিষয়গুলো আমাদের বাস্তব জগতে নানা আইনের বেড়াজালে বন্দি হলেও, কাল্পনিক জগতে এরা সহজলভ্য।

গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, কাল্পনিক জগতে এসব পরিস্থিতিতে একজন মানুষ বাস্তব জীবনের মতোই স্নায়ুবিক ও শারীরিক অনুভূতির স্বাদ পান। ফলে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি আমাদের মনুষ্যত্ব বোধকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে কি না, মনোবীদরা সেটিও ভেবে দেখতে বলেছেন প্রযুক্তিবিদদের।

তবে, যেহেতু কোনো শঙ্কাই আজ পর্যন্ত নতুন প্রযুক্তিকে মানুষের হাতের মুঠোয় আসা থামাতে পারেনি। বুদ্ধিমান মানুষও ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ইতিবাচক দিক গুলো নিয়ে আরও এগিয়ে যাবে, এটিই আমাদের প্রত্যাশা।

সূত্র: সায়েন্স জার্নাল, উইকিপিডিয়া এবং ইন্টারনেট।

A PHP Error was encountered

Severity: Core Warning

Message: Cannot load module 'memcached' because required module 'igbinary' is not loaded

Filename: Unknown

Line Number: 0

Backtrace: