মীর তাফহীম মাহমুদ

১৭ জানুয়ারি ২০১৫ ১২:০০


বিভাগ: পদার্থবিদ্যা

পড়ার সময়: ২ মিনিট


শব্দ পরীক্ষা করে বুঝে নিন বস্তু শতভাগ বিশুদ্ধ কি না


কোনো বস্তু ১০০% বিশুদ্ধ কিনা সেটা ঘরে বসেই জেনে নিন শব্দ পরীক্ষা করে...

কোনো বস্তু শতভাগ বিশুদ্ধ হতে পারে না। কিন্তু যদি কোনোভাবে ১০০% বিশুদ্ধ জিনিস পেয়ে যাই তাহলে কীভাবে পরীক্ষা করব?

আমরা জানি কোনো বস্তুতে কম্পনের সৃষ্টি হলে শব্দ উৎপন্ন হয়। এক্ষেত্রে ঘটে- কোনো বস্তুর একটি কণা তার পাশের কণাতে ধাক্কা খেতে খেতে আমাদের কানে পৌঁছালে আমাদের শ্রবণ অনুভূতি জন্ম হয়।

প্রতিটি আওয়াজের জন্য বস্তুতে নির্দিষ্ট পরিমাণ কণার কম্পন ঘটে। তাই আমাদের আওয়াজগুলো ভিন্ন হয়। যেমন- ‘ক’ বলতে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ বায়ুর কণার কম্পন ঘটে। আবার ‘খ’ বলতেও নির্দিষ্ট পরিমাণ বায়ুর কম্পন ঘটে। যাদের গলা চিকন ও মোটা হয় তাদের আওয়াজেও এক নির্দিষ্ট পরিমাণ বায়ুর কণার কম্পন ঘটে তবে তা ভিন্ন। তাই আমাদের সবার গলা এক রকম হয় না।

আমরা জানি, শব্দ সবচেয়ে দ্রুত চলে কঠিন তারপর তরল এবং সবশেষে বায়ুতে।

কিন্তু শব্দ সবচেয়ে স্পষ্ট শোনা যায় উল্টোভাবে। প্রথমে বায়ুতে তারপর তরলে এবং তারপর কঠিন মাধ্যমে।

এমন হয় কেন?

এমন হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে বস্তুকণার ঘনত্ব। কঠিন পদার্থে সবচেয়ে দ্রুত শব্দ শোনায় কারণ কঠিন পদার্থের ঘনত্ব বেশি। ঘনত্ব বেশি হওয়ায় এক কণা অন্য কণাকে দ্রুত ধাক্কা দিতে পারে। তাই কঠিন মাধ্যমে শ্রোতা দ্রুত শুনতে পারে। তরল পদার্থ কঠিন পদার্থ থেকে হালকা হওয়ায় এর ঘনত্ব কম থাকে। যার জন্য তরল পদার্থে কঠিন পদার্থ হতে ধীরে শব্দ শোনা যায়। বায়বীয় পদার্থ অধিক হালকা হওয়ায় এই মাধ্যমে শব্দ সবচেয়ে ধীরে শোনা যায়।

কিন্তু শব্দের স্পষ্টতা কেন উল্টো?

এর কারণও বস্তুর ঘনত্বের ওপর নির্ভর করে। বায়ুতে শব্দ স্পষ্ট হয় বায়ুর ঘনত্ব অনেক কম বলে। বায়ুর ঘনত্ব কম হওয়ায় একটি শব্দের জন্য যতটুকু পরিমাণ কণার কম্পন হওয়া দরকার ততটুকু কম্পন হয়ে অন্য কণায় ধাক্কা দেয়। আর ওই কণাও একই পরিমাণ কম্পন উৎপন্ন করে। যার ফলে বায়বীয় মাধ্যমে শ্রোতার স্পষ্ট শ্রবণ অনুভূতি জন্ম হয়।

কিন্তু তরল পদার্থের ঘনত্ব বায়বীয় হতে বেশি হওয়ায় উচ্চারিত শব্দের জন্য যতটুকু কম্পন হওয়া দরকার ততটুকু কম্পন হওয়ার আগেই কম্পিত প্রথম কণা অন্য কণাকে ধাক্কা দেয়। তাই তরল পদার্থে শব্দ স্পষ্ট শোনা যায় না।

কঠিন মাধ্যমের ঘনত্ব আরো বেশি হওয়ায় এর ভেতর দিয়ে আরো অস্পষ্টভাবে শব্দ শোনা যায়।

আর এই ঘনত্বের জন্যই পদার্থের স্পষ্টতার তারতম্য ঘটে।

১০০% বিশুদ্ধতা নির্ণয়-

কোনো জিনিস ১০০% বিশুদ্ধ তা শব্দ দিয়ে সহজে শনাক্ত করতে পারি। এর জন্য কোনো গণিতিক সূত্র বা দুস্প্রাপ্য কিছুর প্রয়োজন হবে না।  

পরীক্ষা-

কেউ যদি কোনো অজানা বস্তু পান এবং দেখে মনে করেন বস্তুটি ১০০% বিশুদ্ধ তাহলে সেটি বাড়িতে নিয়ে একজনকে বলবেন বস্তুটির একপাশ তার কানে ধরতে। অতঃপর বস্তুটি কানে ধরার পর আপনি এই বস্তুটিকে কোনো জিনিস দিয়ে আঘাত করুন।

এখন যিনি বস্তুটির একপাশ কানে ধরেছে তাকে জিজ্ঞাস করুন ‘আওয়াজ কেমন ছিল?’

উত্তরে যদি ব্যক্তিটি বলে ‘অনেক দ্রুত’ তাহলে আপনি নিশ্চিত হোন আপনি যে বস্তুটি এনেছেন সেটি ১০০% বিশুদ্ধ নয়।

কিন্তু উত্তরে যদি ব্যক্তিটি বলে ‘কোনো শব্দ হয়নি’ তাহলে আপনি নিশ্চিত হোন আপনার অজানা বস্তুটি ১০০% বিশুদ্ধ।

কিন্তু কেন?

আমরা জানি, এমন কোনো বস্তু এখনও কেউ পায়নি যা ১০০% বিশুদ্ধ। কিন্তু যে পদার্থকে সবচেয়ে বেশি বিশুদ্ধ বলা হয় তা হলো হিরক। কিন্তু সেটা ১০০% বিশুদ্ধ না। হিরকের ঘনত্ব বেশি হওয়ায় এই পদার্থ দিয়ে খুব দ্রুত শব্দ সঞ্চালিত হতে পারে। কিন্তু হিরক যদি ১০০% বিশুদ্ধ হতো তবে এই মাধ্যম দিয়ে শব্দ শোনা যেত না।

এরকম হয় পদার্থের কণার ঘনত্বের কারণে। কোনো ১০০% বিশুদ্ধ পদার্থে আঘাত করলে শব্দ শোনা যাবে না এর ভেতরের কণার দৃঢ়তা বেশি হওয়ার কারণে। এর ভেতরের কণাগুলো এতই দৃঢ় থাকে যে তাদের আঘাত করলে কণাগুলো ফাঁকা স্থান না থাকায় কোনো দিকেই নড়চড় করতে পারে না। যার ফলে কোনো কম্পন সৃষ্টি হতে পারে না। কম্পন সৃষ্টি হওয়ার জন্য অল্প হলেও ফাঁকা স্থান দরকার হয়। ফাঁকা স্থান থাকলে কণাগুলো নড়চড় করে কম্পন সৃষ্টি করে।

তাই ১০০%বিশুদ্ধ পদার্থের মধ্য দিয়ে শব্দ সঞ্চালিত হয় না।  

তবে যে বস্তু দিয়ে আঘাত করা হবে সে বস্তুর কম্পনের ফলে শব্দ উৎপন্ন হতে পারে।